 |
আমেরিকার স্টুডেন্ট ভিসা: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ‘পাবলিক প্রোফাইল’ শর্ত
|
আমেরিকায় পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শর্ত যুক্ত হয়েছে, যা এখন ভিসা আবেদনকারীদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, যারা F-1, M-1 বা J-1 স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করবেন, তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল উন্মুক্ত বা ‘পাবলিক’ রাখতে হবে। এই সিদ্ধান্ত মার্কিন সরকারের নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর এবং স্বচ্ছ করার অংশ। এখন থেকে দূতাবাসের ভিসা অফিসাররা আবেদনকারীর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউবসহ সব সোশ্যাল প্রোফাইল খোলা দেখতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় যাচাই করবে।
মার্কিন দূতাবাস বলছে, এই নতুন নিয়মের উদ্দেশ্য একটাই—যেন কোনো সহিংস, উস্কানিমূলক বা সন্ত্রাসবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তি শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ না করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতি অনুসারে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসা দেওয়া মানে তাকে সমাজে স্বাগত জানানো এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই আবেদনকারীর অনলাইন উপস্থিতি নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে, ভিসা প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, জিজ্ঞাসাবাদ, এমনকি আবেদন প্রত্যাখ্যানও হতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যায়। নতুন শর্তে এখন সবাইকে ভিসার জন্য আবেদন করার আগে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে। পুরনো পোস্ট, মন্তব্য বা শেয়ার করা কনটেন্টে কোনো সহিংসতা, উস্কানি, ঘৃণার ভাষা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকলে সেগুলো মুছে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ভিসা অফিসারদের নজরে এ ধরনের কিছু এলে পুরো আবেদন প্রক্রিয়া ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
গত মে মাসে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস সব নতুন F, M এবং J ক্যাটাগরির স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল। তখন জানানো হয়েছিল যে নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া হালনাগাদ করা হচ্ছে। জুনের ১৮ তারিখ থেকে আবার আবেদন নেওয়া শুরু হলেও এবার নতুন শর্ত চালু হয়েছে। এখন আবেদনকারীদের অন্তত ৫ বছরের সোশ্যাল মিডিয়া ইউজারনেম, লিঙ্ক এবং প্রোফাইল history জমা দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। আগে ভিসা প্রক্রিয়ায় শুধু ফিনান্সিয়াল প্রমাণ, ভর্তি অনুমোদনপত্র (I-20), এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার হতো। এখন এর সাথে যোগ হয়েছে অনলাইন উপস্থিতি যাচাই। ফলে শিক্ষার্থীদের নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল public রাখতে হবে এবং সেটি যেন পরিচ্ছন্ন ও পেশাদার হয়, সেদিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন—যারা আবেদন করবেন, তারা যেন আগে থেকেই প্রোফাইল পাবলিক করেন এবং কোনো ভুল তথ্য না দেন। অনলাইনে উস্কানিমূলক বা সহিংস মন্তব্য এড়িয়ে চলা এবং সত্যনিষ্ঠ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ভিসা ইন্টারভিউতে সঠিক উত্তর, স্পন্সরের ফিনান্সিয়াল ডকুমেন্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং অন্য প্রমাণপত্র ঠিকমতো প্রস্তুত রাখা উচিত।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলোর একটি। ভালো মানের শিক্ষা, বৈশ্বিক মানের ডিগ্রি, এবং ক্যারিয়ারের সুযোগ অনেককে সেখানে টানে। তবে নতুন এই নিয়ম স্পষ্ট করে দিয়েছে যে স্বপ্নের দেশেও পৌঁছাতে হলে নির্দিষ্ট নিয়ম মানা জরুরি। সতর্ক থাকা, স্বচ্ছ থাকা এবং দায়িত্বশীল আচরণই এখন ইউএস স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার মূল শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যারা এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে চান, তাদের উচিত হবে আবেদন করার আগে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল পরিস্কার করা, বিতর্কিত কিছু থাকলে সরিয়ে ফেলা এবং ভিসা অফিসারের সামনে নিজেকে সৎ এবং স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা। সঠিক প্রস্তুতি নিলে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যেমন সম্ভব, তেমনি ভবিষ্যতে সেটি নিরাপদ ও সফল অভিজ্ঞতাও হবে।
0 Comments